আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিশ্বের সর্বাত্মক যুদ্ধ এগিয়ে আসছে না কেউ শান্তি রক্ষায়। ইরান-ইসরাইল সংঘাত আজ কয়েক সপ্তাহ হয়েছে। যুদ্ধ বন্ধ করার বিষয়ে কোনো আন্তর্জাতিক উদ্যোগ গ্রহণ না করার বিষয়টি উদ্বেগজনক। পালটাপালটি হামলায় সংঘাত আরও তীব্র হচ্ছে। উপসাগরীয় অঞ্চলে সর্বাত্মক যুদ্ধের আশঙ্কা বাড়ছে। জাতিসংঘ, ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি), এমনকি বিশ্বের মুসলিম দেশগুলোর পক্ষ থেকেও সংঘাত বন্ধে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দৃশ্যমান নয়। ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলের বর্বরোচিত হামলা বন্ধেও এসব সংস্থা ও দেশগুলো কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি, যা নিন্দনীয়। ইরান-ইসরাইল সংঘাতে তেল আবিবকে অনেকটা প্রকাশ্যেই সমর্থন দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র এবং মধ্যপ্রাচ্যে বিমানবাহী রণতরি পাঠিয়েছে। এদিকে ইরানের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসাবে পরিচিত চীন ও রাশিয়া জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠকে ইসরাইলের অব্যাহত হামলার নিন্দা জানালেও যুদ্ধ বন্ধে দেশ দুটির কোনো সক্রিয় ভূমিকা এখনো দৃশ্যমান নয়।
কোনোরকম উসকানি ছাড়াই ইসরাইল গত শুক্রবার রাতের আঁধারে ইরানে হামলা চালায়। এ হামলার টার্গেট ছিল আবাসিক ভবনসহ বিভিন্ন সামরিক স্থাপনা। হামলায় ইরানের শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন সামরিক কর্মকর্তা নিহত হন। বাড়িঘর লক্ষ্য করে হামলা চালানোর ফলে বেসামরিক নাগরিকদেরও প্রাণহানি ঘটে। আক্রান্ত হওয়ার অল্পসময়ের মধ্যেই ইরান প্রতিশোধমূলক পালটা হামলা শুরু করে। ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র তেল আবিব, হাইফাসহ ইসরাইলের বিভিন্ন স্থানে আঘাত হানে। এরপর থেকে ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে পালটাপালটি হামলা অব্যাহত রয়েছে, প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি বাড়ছে। আরও উদ্বেগের বিষয়, এ সংঘাত সর্বাত্মক যুদ্ধের দিকে ধাবিত হওয়ায় বিশ্বের আর্থিক বাজার ও বিমান খাত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। উল্লেখ্য, বিশ্বের অধিকাংশ জ্বালানি তেল এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পণ্য, যেমন প্রাকৃতিক গ্যাস মধ্যপ্রাচ্যের সমুদ্রপথ দিয়ে সরবরাহ করা হয়, যার অন্যতম হলো হরমুজ প্রণালি। এই প্রণালি ইরানকে উপসাগরীয় দেশগুলো থেকে আলাদা করে এবং আরবসাগরকে ভারতমহাসাগরের সঙ্গে সংযুক্ত করে। এটি বিশ্বের সমুদ্রপথে তেলের এক-তৃতীয়াংশ সরবরাহের পথ। ইরান-ইসরাইল সংঘাতের কারণে যদি হরমুজ প্রণালি বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের দাম ব্যাপকভাবে বেড়ে যেতে পারে। তেলের দাম বাড়লে উৎপাদন খরচও বাড়বে, যার পরিণতি শেষ পর্যন্ত ভোক্তাদের ওপর পড়বে। সংঘাত চলতে থাকলে তেল আমদানিকারক দেশগুলোয় উচ্চ মূল্যস্ফীতি দেখা দেবে। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় বাংলাদেশের মতো যেসব দেশের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক জনশক্তি কর্মরত, সেসব দেশের অর্থনীতিতে পড়বে ইরান-ইসরাইল সংঘাতের অভিঘাত। কাজেই অবিলম্বে এ সংঘাতের অবসান কাম্য। ইসরাইল যেভাবে বিনা উসকানিতে ইরানে হামলা শুরু করেছে, তা আন্তর্জাতিক আইন, রীতিনীতি এবং জাতিসংঘ সনদের চরম লঙ্ঘন। এজন্য ইসরাইল সরকারের শাস্তি হওয়া উচিত। বস্তুত দেশটি গত দেড় বছরেরও বেশি সময় ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডে যে ভয়াবহ তাণ্ডব চালিয়ে আসছে, সেজন্য আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালত (আইসিসি) ইতোমধ্যেই ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনঞ্জামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের দায়ে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। তা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন পেয়ে নেতানিয়াহু সরকার ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যাকাণ্ড ও ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে আসছে ফিলিস্তিনে। এবার তারা হামলা চালিয়েছে ইরানে। এক্ষেত্রেও আরব দেশগুলোর ভূমিকা হতাশাজনক। তারা যেমন ইসরাইলি বর্বরতা থেকে ফিলিস্তিনিদের রক্ষায় এগিয়ে আসেনি, তেমনই ইরানে ইসরাইলি হামলার ক্ষেত্রেও নীরব ভূমিকা পালন করছে। এ অবস্থায় বিশ্ববিবেক কবে জাগ্রত হবে, তা দেখার অপেক্ষায় আছি আমরা।
সত্যেরপথে.কম/এবি
আপনার মতামত লিখুন :