sotterpathe
Bongosoft Ltd.
ঢাকা সোমবার, ০২ জুন, ২০২৫, ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

সংকটের গহ্বরে বাংলাদেশ: ড. ইউনূস ও একটি জাতির সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ


সত্যের পথে | জেলা সংবাদ প্রকাশিত: মে ২৬, ২০২৫, ০৩:৫৮ পিএম সংকটের গহ্বরে বাংলাদেশ: ড. ইউনূস ও একটি জাতির সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ

লেখক : শফিউল বারী রাসেল, (কবি, গীতিকার, প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক)

একটি জাতির ইতিহাস কখনো কখনো এমন এক সন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়ায়, যেখানে প্রতিটি সিদ্ধান্ত — ব্যক্তি হোক বা রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারক ভবিষ্যতের গতিপথ নির্ধারণ করে দেয়। আজ বাংলাদেশ তেমনই এক দ্বিধাগ্রস্ত মোড়ে দাঁড়িয়ে। প্রশ্ন একটাই—জাতির ভবিষ্যৎ কোন পথে যাবে? নেতৃত্বশূন্য এক দোলাচলের দিকে, না কি পরিণত, বিবেচনাশীল ও দায়িত্বশীল নেতৃত্বের আলোকবর্তিকায়?

বর্তমানে দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে আলোচিত নাম—ড. মোহাম্মদ ইউনূস। একজন নোবেলজয়ী, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মানবদরদী ও সামাজিক ব্যবসার পথিকৃত হিসেবে তিনি শুধু একজন ব্যক্তি নন, বরং একটি প্রতীকে পরিণত হয়েছেন। কিন্তু আজ, তাঁকে ঘিরে দেশের রাজনীতি এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে, যেখানে তাঁর অবস্থান শুধু বিতর্কের নয়, বরং ভবিষ্যতের নির্ধারক হয়ে উঠেছে।

আমরা যখন বলি, “একজন ড. ইউনূস বারবার আসে না,” তখন আসলে আমরা ইতিহাসের সাক্ষ্য দিচ্ছি। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ যেমন ড. ইউনূসের মতো আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব তৈরি করতে পারেনি, ভবিষ্যতেও তেমন সম্ভাবনা দুর্লভ। অথচ আজ তাঁকে কেন্দ্র করে এমন এক নাটকীয় প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে, যেখানে মনে হচ্ছে—একজন ব্যক্তিকে সরিয়ে দিয়ে গোটা রাষ্ট্র কাঠামো নতুন করে সাজাতে চায় কিছু গোষ্ঠী।

এই অবস্থান থেকে পিছু হটলে, দেশের সামনে যেটা অপেক্ষা করছে, তা কল্পনাতীত অরাজকতা। ইতিহাসের আয়নায় যদি আমরা তাকাই, মিশরের উদাহরণ চোখে পড়ে। হোসনি মোবারকের পতনের পর গণতন্ত্র ফিরে এসেছিল ঠিকই, কিন্তু তার স্থায়িত্ব ছিল ক্ষণিক। মুরসি ক্ষমতায় এসেই চরম চাপের মুখে পড়ে যান—জনগণের অতিরিক্ত দাবি, রাজনৈতিক বিরোধিতা, আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ, সব মিলিয়ে রাষ্ট্র অচল হয়ে পড়ে। এর পরিণতি? সামরিক অভ্যুত্থান, স্বৈরতন্ত্রের পুনরাগমন এবং গণতন্ত্রের মৃত্যু।

বাংলাদেশ কি এখন সেই পথেই হাঁটছে?
বর্তমান ক্ষমতাসীনদের পতনের পর যদি হঠাৎ করে এক দুর্বল গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব আসে এবং চারদিক থেকে চাপের মুখে পড়ে, তাহলে একসময় হয়তো তাকেও সরিয়ে দেওয়া হবে। অস্থিরতা যখন চূড়ায় পৌঁছাবে, তখনই "ত্রাতা" রূপে আবির্ভূত হবেন কোনো "জেনারেল" — ইতিহাসের চেনা চিত্রনাট্য। তখন গণতন্ত্রকে ছুড়ে ফেলে আবার শুরু হবে দমনপীড়ন, বিরোধীদের গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড—এবং এই দেশের ভবিষ্যৎ হয়ে পড়বে আরও অনিশ্চিত।

সামরিক হস্তক্ষেপের ভয়, উগ্র গোষ্ঠীর উত্থানের ছক এবং বিদেশি চাপের মধ্যে থেকে যিনি আজ একা দাঁড়িয়ে আছেন, তিনি ড. ইউনূস। তাঁকে সরিয়ে দিলে যে শূন্যতা তৈরি হবে, সেটি সহজে পূরণ হবার নয়। বরং এর ফলে রাষ্ট্র কাঠামো ভেঙে পড়ার আশঙ্কাই প্রবল। জনগণ যাদের পরিবর্তনের জন্য আন্দোলনে নেমেছিল, তাদের মধ্যেই দেখা দিয়েছে বিভক্তি, দায়িত্বহীনতা ও স্বার্থপরতা। সবাই চায় পরিবর্তন, কিন্তু সেই পরিবর্তন ধরে রাখার দায়িত্ব কেউ নিতে চায় না।

প্রশ্ন ওঠে—এখন করণীয় কী?
প্রথমত, আমাদের প্রয়োজন সংবেদনশীলতা ও বস্তুনিষ্ঠ মূল্যায়ন। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অন্ধ বিদ্বেষ নয়, বরং তার ভূমিকাকে রাষ্ট্রীয় প্রেক্ষাপটে বিবেচনা করতে হবে। দ্বিতীয়ত, গণতন্ত্রের নামে দায়িত্বহীন দাবি-দাওয়ার চর্চা বন্ধ করতে হবে। গণতন্ত্র মানে শুধু দাবি নয়, দায়িত্বও।

তৃতীয়ত, সেনাবাহিনীর প্রতি দায়িত্বপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি রাখতে হবে। তাদের ‘ত্রাতা’ বানাতে চাইলে ইতিহাস প্রমাণ করে, ফলাফল ভালো হয় না।

চতুর্থত, আমাদের তরুণ সমাজকে জ্ঞান, যুক্তি ও দূরদর্শিতার চর্চায় উদ্বুদ্ধ করতে হবে, যাতে তারা অন্ধ আবেগে নয়, যুক্তিপূর্ণ চিন্তায় দেশ পরিচালনার প্রশ্নে অবস্থান নিতে পারে।

শেষ কথা, আজ যারা হতাশায় বলছেন, “বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ছাড়তে চাই,” তাঁদের মনে রাখা দরকার—এই দেশ আমাদের, এর ভবিষ্যৎও আমাদের হাতে। ড. ইউনূস একা কিছু করতে পারবেন না, যদি আমরা পাশে না দাঁড়াই। তাই প্রয়োজন সাহসী ও সুস্থ বিবেকের একতার।

এখন সময়, বলার—“আমরা আপনার পাশে আছি, ড. ইউনূস। আপনি থাকুন। আমরা দায়িত্বশীলভাবে দেশকে আগলে রাখবো। 

সত্যেরপথে.কম/এবি

 

Side banner