sotterpathe
Bongosoft Ltd.
ঢাকা শুক্রবার, ০৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ২১ ভাদ্র ১৪৩২

সাংবাদিক নির্যাতনের মামলায় কুড়িগ্রামের সাবেক ডিসি কারাগারে


সত্যের পথে | প্রধান সংবাদ প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৩, ২০২৫, ০৬:৫৫ পিএম সাংবাদিক নির্যাতনের মামলায় কুড়িগ্রামের সাবেক ডিসি কারাগারে

প্রধান সংবাদ : সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগানকে নির্যাতনের মামলায় কুড়িগ্রামের সাবেক জেলা প্রশাসক (ডিসি) সুলতানা পারভীনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। আজ মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কুড়িগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোছাম্মৎ ইসমত আরা বেগম তার আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগানের আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে সকাল ১১টায় সুলতানা পারভীন জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজিরা দিতে আসেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হিসেবে ছিলেন কুড়িগ্রাম জেলা পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মো. বজলুর রশিদ ও অ্যাডভোকেট আজিজার রহমান দুলু। আসামিপক্ষের আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট ফখরুল ইসলাম। আদালত সূত্র জানা যায়, আজ মঙ্গলবার সকাল সোয়া ১১টার দিকে আদালতের এজলাস কক্ষে প্রবেশ করেন সুলতানা পারভীন। প্রথমে আদালতের কাঠগড়ায় না উঠে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকেন।

সাংবাদিক আরিফের আইনজীবী বিষয়টি আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। পরে আসামি সুলতানা পারভীনকে কাঠগড়ায় নেওয়া হয়। আসামি পক্ষে জামিন আবেদনের শুনানি করেন অ্যাডভোকেট ফখরুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন আইনজীবী। সাংবাদিক আরিফের পক্ষে আজিজুর রহমান দুলুসহ জেলা বারের বেশ কয়েকজন আইনজীবী শুনানিতে অংশ নেন। আদালত প্রথম দফায় প্রায় সোয়া ১ ঘণ্টা উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শোনেন। পরে মুলতবি দিয়ে আবার দুপুর আড়াইটায় শুনানি শুরু হয়। উভয়পক্ষের শুনানি ও এজাহার পর্যালোচনা করে আদালত আসামি সুলতানা পারভীনের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আদেশের কিছু পরেই প্রিজন ভ্যানে করে সুলতানা পারভীনকে কারাগারে নিয়ে যায় পুলিশ।

আদালত সূত্রে জানা যায়, এর আগে গত ৩ আগস্ট আসামি সুলতানা পারভীন হাইকোর্টে আগাম জামিন আবেদন করেন। হাইকোর্ট তাকে জামিন না দিয়ে চার সপ্তাহের মধ্যে কুড়িগ্রাম জেলা জজ আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। এরপর সুলতানা পারভীন গত ২১ আগস্ট কুড়িগ্রাম জেলা জজ আদালতে জামিন আবেদন করেন। তবে আইন অনুযায়ী তিনি স্বশরীরে আদালতে উপস্থিত হননি। এ নিয়ে আপত্তি জানিয়ে সাংবাদিক আরিফের আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু আদালতে একটি পিটিশন দাখিল করেন। আজ মঙ্গলবার আদালত সবকটি আবেদন শুনানি শেষে আসামি সুলতানা পারভীনের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এর আগে কুড়িগ্রাম শহরের একটি সরকারি পুকুর সংস্কার করে ডিসির নামে নামকরণ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জেরে ২০২০ সালের ১৩ মার্চ দিবাগত মধ্যরাতে সাংবাদিক আরিফকে তার বসতবাড়ি ও বসতঘরের গেট ভেঙে তুলে নিয়ে যায় জেলা প্রশাসনের তিন ম্যাজিস্ট্রেটসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা। তাকে ক্রসফায়ারে দেওয়ার উদ্দেশে জেলা শহরের পূর্বে ধরলা নদীর তীরে নেওয়া হয়। পরে সেখান থেকে ফিরিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নিয়ে বিবস্ত্র করে পেটানো হয়। এরপর মাদক রাখার অভিযোগ দেখিয়ে মধ্যরাতেই ভ্রাম্যমাণ আদালতের নামে এক বছরের কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ১৫ দিনের কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়। এ নিয়ে সারা দেশে প্রতিক্রিয়া ও প্রতিবাদ শুরু হলে একদিন পর সাংবাদিক আরিফকে জামিন দেয় জেলা প্রশাসন। 

জামিনে মুক্তি পেয়ে কুড়িগ্রাম সদর থানায় তৎকালীন ডিসি সুলতানা পারভীন ও তিন ম্যাজিস্ট্রেটসহ অজ্ঞাত ৩০/৩৫ জনকে আসামি করে এজাহার দায়ের করেন। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে ২০২০ সালের ৩১ মার্চ এজাহারটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করে কুড়িগ্রাম সদর থানা পুলিশ। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) মামলাটি তদন্ত করে ঘটনার দীর্ঘ পাঁচ বছর পর আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছে। চার্জশিটে সাবেক ডিসি সুলতানা পারভীন, তৎকালীন আরডিসি নাজিম উদ্দিন, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমা এবং এস এম রাহাতুল ইসলামকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এরপর জামিন নিতে আদালতে আত্মসমর্পণ করেন সুলতানা পারভীন। অপর আসামিরা এখনো আদালতে আত্মসমর্পণ করেননি।

সত্যেরপথে.কম/এবি

Side banner