sotterpathe
Bongosoft Ltd.
ঢাকা মঙ্গলবার, ০১ জুলাই, ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২

ট্রেন দুর্ঘটনায় যাঁদের গাফিলতি থাকলে শাস্তির ব্যাবস্থা হবে


সত্যের পথে | জাতীয় প্রকাশিত: জুন ২৬, ২০২৫, ১২:০৮ পিএম ট্রেন দুর্ঘটনায় যাঁদের গাফিলতি থাকলে শাস্তির ব্যাবস্থা হবে

সম্পাদকীয়

ট্রেন দুর্ঘটনায় যাঁদের গাফিলতি থাকবে, তাঁদেরকে অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনা উচিৎ। নিরাপদ গণপরিবহনব্যবস্থা হিসেবে পরিচিত হলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ট্রেন দুর্ঘটনা উদ্বেগের বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অব্যবস্থাপনা, সিগন্যাল না মানা, দায়িত্বপ্রাপ্তদের অবহেলা এগুলোই ট্রেন দুর্ঘটনার মূল কারণ। সেটা সবার জানা থাকলেও এ থেকে উত্তরণে রেলওয়ের উদ্যোগ নেই বললেই চলে। প্রতিবারই দুর্ঘটনার পর ট্রেন পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত নিম্নস্তরের কর্মীরা শাস্তির আওতায় আসেন। কিন্তু ঊর্ধ্বতনেরা জবাবদিহির বাইরে থাকায় প্রকৃতপক্ষে একই ভুলের পুনরাবৃত্তি ঘটে। ফলে কিছুদিন পরপরই একেকটা ট্রেন দুর্ঘটনা একেকটা অন্তহীন ট্র্যাজেডির জন্ম দেয়।

এবার ঈদুল আজহার আগে চট্টগ্রামের কালুরঘাট সেতুর পূর্ব প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা সাতটি গাড়িতে ধাক্কা দেয় কক্সবাজার থেকে ছেড়ে আসা পর্যটক এক্সপ্রেস। এতে দুই বছরের শিশুসহ দুজন নিহত হন, আহত হন ১৬ জন। সেই দুর্ঘটনায় নিহত শিশুটিকে কোলে নিয়ে বাবার আর্তনাদের ভিডিও আমাদের সবাইকে অশ্রুসিক্ত করেছে। রেলওয়ের প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, ট্রেনটি সেতুতে ওঠার নিয়ম না মেনে সংকেত অমান্য করে দ্রুতগতিতে ঢুকে পড়ে। প্রাথমিক তদন্তের ওপর ভিত্তি করে ট্রেনটির লোকোমাস্টারসহ চারজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে ও দায় নিরূপণ করতে রেলওয়ে তাদের কর্মকর্তাদের দিয়ে একটি তদন্ত কমিটি করেছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, তদন্ত কমিটি কি ভবিষ্যতে যাতে আর এ ধরনের দুর্ঘটনা না ঘটে, সেটা মাথায় রেখে পক্ষপাতমুক্তভাবে তদন্ত করতে পারবে? রেলওয়ের ঐতিহ্য কিন্তু সেটা বলছে না।

ছয় বছরে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে ছয়টি বড় ট্রেন দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে অন্তত ৫৩ জনের। আহত হয়েছেন শতাধিক যাত্রী। এসব ঘটনায় রেলওয়ের তদন্ত কমিটি প্রতিবারই দায় চাপিয়েছে ট্রেনচালক, সহকারী চালক, গার্ড ও গেটম্যানদের ওপর। 

দেখা যাচ্ছে যে ট্রেন দুর্ঘটনা তদন্তে গঠিত তদন্ত দল দুর্ঘটনার পেছনে উচ্চপর্যায়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের অবহেলার বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া হয়। এ রকম পূর্বনির্ধারিত ও পক্ষপাতদুষ্ট তদন্ত কি পরবর্তী দুর্ঘটনা রোধে আদৌ কোনো ভূমিকা রাখতে পারে? এ কারণে পরিবহন বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন ধরেই রেলওয়ের তদন্ত কমিটিতে নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞ অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়ে আসছেন। আমরা মনে করি, পরিবহনবিশেষজ্ঞ মো. সামছুল হক সরকারি-বেসরকারি সংস্থার বিশেষজ্ঞদের দিয়ে তদন্ত কমিটি করে ট্রেন দুর্ঘটনার মূল কারণ খুঁজে বের করার যে দাবি করেছেন, সেটা যথার্থ।

ট্রেন দুর্ঘটনায় যাঁদের অবহেলা ও গাফিলতি থাকবে, তাঁদেরকে অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনতে হবে। কিন্তু শুধু নিম্নস্তরের কর্মীদের শাস্তি দিয়ে ট্রেন দুর্ঘটনা বন্ধ করা সম্ভব নয়। নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমেই বের করা প্রয়োজন ঊর্ধ্বতন ও অধস্তন, কার দায় কতটা।

সত্যেরপথে/সংগৃহীত

Side banner